বাইপোলার জাংসন ট্রানজিস্টর - BJT ( পরিচিতি, ইতিহাস, গঠন এবং কার্যপ্রনালি )
বাইপোলার জাংসন ট্রানজিস্টার কি (what is BJT) ?
খুব সহজ ভাবে বলতে চাইলে, ট্রানজিস্টার এক ধরণের ইলেকট্রিক সুইচ। সুইচ সম্পর্কে আমাদের সবারই ধারনা আছে কারন এটা আমরা প্রতিনিয়ত ব্যবহার করে থাকি। খুব সহজ উদাহরন, আমাদের বাসার ফ্যান, লাইট চালু বা বন্ধ করতে আমরা সুইচ ব্যবহার করি। তাহলে এই সুইচের সাথে ট্রানজিস্টার এর পার্থক্য কোথায় ? যে সুইচ গুলো আমাদের ম্যানুয়ালি অন অফ করতে হয় অর্থাৎ আমাদের বাসা বাড়িতে ব্যবহৃত সুইচ এগুলো হলো মেকানিক্যাল সুইচ। সুইচ কয়েক রকমের আছে যেমন, ইলেকট্রিক সুইচ, মেকানিক্যাল সুইচ, অপটিক্যাল সুইচ। ইলেকট্রিক সুইচ অর্থাৎ ট্রানজিস্টার এর বেলায়, এটি অন অফ করতে ইলেকট্রিক সিগন্যাল ব্যবহার করা হয়। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ট্রানজিস্টার এর কার্যপ্রনালি সেকশনে আলোচনা করা হয়েছে।
ট্রানজিস্টর এর ইতিহাস ?
আধুনিক ট্রানজিস্টর এর আবিষ্কার বর্তমান দুনিয়ার চেহারায় বদলে দিয়েছে। আজ আমরা যে তথ্য প্রযুক্তির যুগে বাস করছি তার ভিত্তিই হচ্ছে ট্রানজিস্টর। এটির আবিষ্কার এর আগে বিকল্প হিসেবে ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার করা হতো। ভ্যাকুয়াম টিউবের দুটি সমস্যা হলো, এটি আকারে অনেক বড় এবং অনেক বেশি বিদ্যুৎ অপচয় হয়। পৃথিবীর প্রথম জেনারেল পারপাস ডিজিটাল কম্পিউটার এর নাম রাখা হয়েছিল " এনিয়াক ", যেটি তৈরিতে প্রায় আট হাজার ভ্যাকুয়াম টিউব দরকার পড়েছিল। নিচের ছবিতে এনিয়াকের একাংশ তুলে ধরা হয়েছে। আজ আমরা যে স্মার্টফোন ব্যবহার করি, এর প্রসেসরে প্রায় ২ বিলিয়ন ট্রানজিস্টর রয়েছে। ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার করা হলে এটি রাখার জন্য হয়ত পুরো ঢাকা শহর দরকার পড়ত যেটা আজ আমরা পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
ট্রানজিস্টর এর প্রকারভেদ ?
তড়িৎ প্রবাহের ধরণের উপর ভিত্তি করে ট্রানজিস্টরকে প্রধানত দুইভাবে ভাগ করা যায়।
১। ইউনিপোলার ঃ যেখানে শুধুমাত্র ইলেকট্রন অথবা হোল দ্বারা তড়িৎ প্রবাহিত হয় ( যে কোনো একটি পরিবাহক। উদাহরনঃ Field Effect Transistor (FET)
২। বাইপোলারঃ যেখানে ইলেকট্রন এবং হোল উভয় পরিবাহক দ্বারা তড়িৎ প্রবাহিত হয়। উদাহরনঃ Bipolar Junction Transistor (BJT)
এই পোস্টের আলোচনার বিষয় শুধুমাত্র বাইপোলার জাংশন ট্রানজিস্টর (BJT)। পরে অন্য কোনো পোস্টে ফিল্ড এফেক্ট ট্রানজিস্টর (FET) নিয়ে আলোচনা হবে। উপরের চিত্রে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে বাইপোলার জাংশন ট্রানজিস্টর (BJT) আবার দুই রকমের হয়। PNP ( Positive- Negative- Positive ) type এবং NPN ( Negative - Positive - Negative ) type. পরবর্তী সেকশনে বাইপোলার জাংশন ট্রানজিস্টর (BJT) এর গঠন দেখেলে আমরা বিস্তারিত জানতে পারব।
বাইপোলার জাংশন ট্রানজিস্টর (BJT) এর গঠন
ইলেকট্রনিক্স এর রেভ্যুলিসনের পেছনে যেই মৌলটির অবদান সবচেয়ে বেশি তা হল সিলিকন। অ্যামেরিকায় একটি শহরের নামই দেয়া হয়েছে এই মৌলের নাম অনুসারে, "সিলিকন সিটি"। ট্রানজিস্টর থেকে শুরু করে কম্পিউটারের প্রসেসর সবকিছুর সিলিকন দিয়ে তৈরী। আমরা জানি সিলিকন অধাতু অর্থাৎ এটি স্বাভাবিক অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করেনা কারন সিলিকন ক্রিস্টালে কোনো মুক্ত ইলেকট্রন থাকে না। নিচের চিত্রে আমরা সিলিকনের কোভ্যালেন্ট বন্ড দেখতে পাচ্ছি যেখানে কোন মুক্ত ইলেকট্রন নেই।
ডোপিং কি ?
যদি সিলিকন অনুসমূহের মধ্যে খুব অল্প পরিমানে বোরন / ফসফরাস মেশানো হয় তাহলে দেখা যায়, সিলিকন ইলেকট্রন প্রবাহ করতে সক্ষম হয়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ডোপিং। এক্ষেত্রে, প্রতি ১০০ মিলিয়ন সিলকন পরমানুর মধ্যে একটি বোরন / ফসফরাস পরমানু, এই অনুপাতে ডোপিং করলে তাকে বলা হয় লাইটলি ডোপড (Lightly Doped) ম্যাটেরিয়াল আর যদি এই অনুপাতটি হয় প্রতি দশ হাজারে একটি বোরন / ফসফরাস পরমানু তাহলে সেটকে বলা হয় হাইলি ডোপড ম্যাটেরিয়াল (Highly Doped)।
N - Type সেমিকন্ডাকটর ম্যাটেরিয়াল
ডোপিং এ ফসফরাস পরমানু ব্যাহার করা হলে সেটি N - Type ডোপিং । আমরা জানি ফসফরাস এর পারমানবিক সংখ্যা ১৫ অর্থাৎ এর সর্ববহিস্ত কক্ষপথে পাঁচটি ইলেকট্রন রয়েছে কিন্তু সিলিকনের ক্ষেত্রে চারটি। ফলে একটি ইলেকট্রন মুক্ত থাকে যেটি সেমিকন্ডাকটরকে তড়িৎ পরিবহনে সক্ষম করে। যেহেতু ইলেকট্রন Negative Charge কনা তাই এটিকে Negative - Type ( N - Type ) সেমিকন্ডাকটর ম্যাটেরিয়াল বলা হয়।
P - Type সেমিকন্ডাকটর ম্যাটেরিয়াল
এক্ষেত্রে ফসফরাস ব্যবহার না করে বোরন পরমানু ব্যবহার করা হয়। বোরনের বেলায় দেখা যায় এর সর্ববহিস্ত কক্ষপথে তিনটি ইলেকট্রন রয়েছে কিন্তু সিলিকনের ক্ষেত্রে চারটি। ফলে একটি শূন্য স্থানের সৃষ্টি হয় যেটিকে হোল বলা হয়। এই হোল নিকটস্থ সিলিকন কোভ্যালেন্ট বন্ডের ইলেক্ট্রনকে নিকের দিকে টেনে নেয় ফলে সেমিকন্ডাকটরটি তড়িৎ পরিবহনে সক্ষম হয়। এখানে তড়িৎ পরিবহনের কারন হোল যেটি Positive Charger এর এজন্য এই ম্যাটেরিয়ালকে Positive - Type ( P - Type ) ম্যাটেরিয়াল বলা হয়।
যেই বাইপোলার জাংশন ট্রানজিস্টর (BJT) দুইপাশে দুটি P-Type লেয়ার এবং মাঝে N-Type ম্যাটেরিয়াল নিয়ে গঠিত তাকে PNP ( Positive-Negative-Positive) Type BJT এবং যেটি দুটি N-Type লেয়ার এবং মাঝে P-Type NPN ( Negative-Positive-Negative) Type BJT বলে। নিচের চিত্রে একটি PNP type এবং একটি NPN type ট্রানজিস্টর দেখানো হয়েছে। আমরা একটি Arrow দেখেতে পাচ্ছি। Arrow যেদিকে দেখানো আছে সেটি নেগেটিভ।
একটি NPN ট্রানজিস্টরের কার্যপ্রনালি
আমরা ধরে নেই, নিচের চিত্রে দেখানো NPN ট্রানজিস্টরের বাম থেকে প্রথম নেগেটিভ লেয়ারটি N1( Emitter) , মাঝেরটি P (Base) এবং ডানদিকের নেগেটিভ লেয়ারটি N2 (Collector). এই ট্রানজিস্টরটিকে দুটি ডায়ড N1-P এবং P-N2 রূপে বিবেচনা করা যেতে পারে। আমরা যদি কালেক্টর কে ব্যাটারীর পজেটিভ টার্মিনালের সাথে কানেক্ট করি এবং ইমিটারকে নেগেটিভ টার্মিনালের সাথে কানেক্ট করি তাহলে দেখা যায় N1-P ফরয়ার্ড বায়াস এবং P-N2 রিভার্স বায়াসড হয়। ব্যাটারীর সংযোগ উল্টে দিলে, N1-P রিভার্স বায়াসড এবং P-N2 ফরয়ার্ড বায়াস। ট্রানজিস্টরের মধ্যে দিয়ে তড়িৎ পরিবহন হতে হলে N1 - P এবং P-N2 উভয় ডায়োডকেই ফরয়ার্ড হতে হবে।
Image Curtesy: LearnEngineering
এই সমস্যাটি সমাধান করা যায় দ্বিতীয় একটি ব্যাটারি যোগ করে। যদি বেস কে ব্যাটারীর পজেটিভ টার্মিনালের সাথে এবং ইমিটারকে ব্যাটারীর নেগেটিভ টার্মিনালের সাথে সুংযুক্ত করা হয় তাহলে বেস এর মধ্যে থাকা ইলেকট্রন গুলো আকৃষ্ট হয়ে ব্যাটারীর পজেটিভ টার্মিনালের দিকে চলে যাবে। ফলে বেস রিজিয়নে ইলেকট্রন এর ঘাটতি হবে। অন্যদিকে দ্বিতীয় ব্যাটারীর নেগেটিভ টার্মিনাল ইমিটিরের ইলেকট্রন গুলোকে বিকর্ষন করবে ফলে ইলেকট্রন গুলো সহজেই বেস রিজিয়নে চলে যেতে পারবে। প্রথম ব্যাটারী দ্বিতীয় ব্যাটারীর চেয়ে উচ্চ বিভবের হওয়ায়, প্রথম ব্যাটারীর আকর্ষন প্রবল। ফলে বেশিরভাগ ইলেকট্রনই বেস রিজিয়ন ভেদ করে কালেকটের মধ্যে দিয়ে প্রথম ব্যাটারীর পজেটিভ টার্মিনালের দিকে প্রবাহিত হয়। এভাবে N1-P এবং P-N2 উভয় ডায়ডই ফরয়ার্ড বায়াস কন্ডিসনে থাকবে।
বাইপোলার জাংশন ট্রানজিস্টর (BJT) এর প্রয়োগ
১। অ্যামপ্লিফিকেশন ( একটি দুর্বল সিগন্যালকে শক্তিশালী সিগন্যালে পরিনত করা )
২। সুইচিং
৩। ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট
NPN Transistor Practical Example
সিলিকন ডায়ডের ক্যারেক্ট্যারিস্টিক থেকে আমরা জানি, এর মধ্যে দিয়ে তড়িৎ প্রবাহের জন্য নূন্যতম ভোল্টেজ ০.৭ ভোল্ট এর বেশি হতে হবে। নিচের ছবিতে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে বেস টু কালেক্টর ভোল্টেজ > ০.৭ ভোল্ট, ফলে কালেক্টর থেকে ইমিটরের মধ্যে দিয়ে অ্যাামপ্লিফাইড কারেন্ট প্রবাহিত হবে।
Leave a Comment